ছাগল পালন ,ছাগল পালন পদ্ধতি

BDFarmes
6 minute read
0
আজকে আমাদের আলোচ্য বিষয় হলো ছাগল পালনের, গুরুত্ব ও ছাগল পালনের লাভবান কিভাবে হওয়া যায়।  
Seo Frindly Article



  1. ছাগল পালনের গুরুত্ব
১. ছাগলের মাংস সব সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য সুস্বাদু ও উপায়েদ খাদ্য
২. ছাগলের চামড়া অত্যন্ত উন্নত মানের শিল্প পণ্য।দেশি ছাগলের চামড়ার চাহিদা বিশ্ব জুড়ে।
৩. অল্প পুৃজিতে ছাগল লালন পালন করা যায়। দেশি কালো ছাগল দ্রুত বংশ বিস্তার করে। এবং বছরে ২বার বাচ্চা প্রসব করে এবং প্রতিবারে ২ বা দুয়ের অধিক বাচ্চা ‍দিয়ে থাকে। 
৪. ছাগলের দুধ শিশুু, রোগী ও বৃদ্ধরা অতি সহজে হজম করতে পারে। ছাগলের দুধ যক্ষ্মা ও হাপানি রোগ প্রতিরোগ হিসাবে জনশ্রুতি রয়েছে। 
৫. উন্নত দেশে ছাগল , ভেড়া, ও গরুর অর্থ নৈতিক অবদানের হার যথাক্রমে ১১২ঃ ১০০ঃ ৭০  অর্থ্যাৎ ছাগলের অর্থনৈতিক অবদান সবচেয়ে বেশি। 
৬. ক্ষুদ্রান্ত থেকে সারজিক্যাল সুতো, টেনিস, রেকেট স্ট্রিং , মিউজিক্যাল ‍স্ট্রিং প্রভিতি তৈরি করা হয়। 
৭. অনান্য শিল্প উপকরণ হিসাবে উপজাতের ব্যাবহার শিং, দাত, খুর ও হাড় থেকে জিলাটিন আঠা, গহনা, ‍চিরুনি, বোতাম, ছাতা, ও ছুরির বাট ও নানা জাতের প্রাণীর খাদ্য তৈরি করা হয়। 

আদর্শ ছাগল নির্বাচন:
ছাগলের বংশ বৃদ্ধি , মাংস , ও দুধের জন্য ভিন্ন ভিন্ন জাতের ছাগল নির্বাচন করা ভালো। যেমন: ব্লাক বেঙল, বোয়ের ও সানিন জাতি হলো তাদের মধ্যে সবচেয়ে উন্নত ও ভালো জাত। এই জাতের ছাগল গুলো মাংস ও দুধের জন্য বিখ্যাত। 

1) বংশ পরিচয়: 
ছাগীর মা-নানী বৎসরে কতবার এবং কতটি বাচ্চা উৎপাদন করে তার ইতিহাস জানতে হবে। এবং মা-নানীর জাত গুলো কতো লিটার দুধ উৎপাদন করে সেটাও ভালোভাবে জানতে হবে। 

2) দৈহিক গঠন:
ছাগলের দৈহিক গঠন সুুন্দর ও সামন্জস্য পূর্ণ হতে হবে। দেহে মসৃণ ও নরম লোম দ্বারা পরিপূূর্ণ হতে হবে। জাত অনুযায়ী বৈশিষ্ঠ্য বিরাজমান থাকবে। 

3) স্বাস্থ্য: 
প্রজনন যোগ্য ছাগীর স্বাস্থ অবশ্যই ভালো হওয়া উচিত। দুর্বল, অসুস্থ্য, বিকলাংগ বা যৌন রোগের আক্রান্ত ছাগী কখনো ভালো বংশ বিস্তার করার জন্য উপযুক্ত নয়। 


এবার আশা যাক আদর্শ পাঠা নির্বাচন নিয়ে: 

1) জাত:
সুস্বাদু ও মাংস বা চামড়া উৎপাদনের জন্য অবশ্যই ব্লাক বেঙল পাঠা নির্বাচন করতে হবে। 

2) দৈহিক কাঠামো: 
পাঠার দৈহিক কাঠামোর গঠন অঙ্গ প্রতঙ্গ অবশ্যই নিখুত সুগঠিত হওয়া উচিত। 

3) বয়স: 
  • তিন মাস বয়সের পাঠা যৌবন প্রাপ্ত হয়। তবে ছয় মাস পূর্ণ না হলে প্রজনন কাজে ব্যাবহার করা উচিত নয়। 
  • সাধারনত পাঠা ২-৩ বছর বয়সে বেশি যৌনক্ষম হয়ে থাকে।
  • পাঠার জৈবিক চাহিদা কমে গেলে সে পাঠা প্রজনন কাজে না ব্যবহার করাই উচিত হবে।  একটি পাঠার সাহায্যে প্রায় ১৫০-২০০ ছাগীর বেশি পাল দেওয়া উচিত নয়।
Seo Friendly Article
ছাগলের জাত সম্পর্কে ধারণা:

দেশি ছাগলের বৈশিষ্ঠ: 

  • গায়ের রং কালো তবে সাদা, সাদা কালো, ও খয়েরি ইত্যাদি রঙের হতে পারে। শরীরে আকার ছোট। গায়ের লোম মসৃণ ও ছোট। এদের কান ও শিং ছোট এবং ছাগীর তুলনায় পাঠার শিং তুলনামূলক একটু বড় হয়ে থাকে। সাধারণত এই জাতের ছাগী দৈনিক ২০০-৩০০ মি. লি দুধ দিয়ে থাকে।  এদের দুধ প্রদানকাল সাধারনত  ২-৩ মাস। এই জাতের ছাগলের মাংস অত্যন্ত সুস্বাধু। 
  • সাধারনত ১৫-১৬ মাস বয়সেই ছাগী প্রথম বাচ্চা দেয়। প্রথমবার শতকরা ৮০ ভাগ ছাগী ১ টি করে বাচ্চা দেয়। তবে দ্বিতীয়বার থেকে ছাগী ২ টি বা তারও অধিক বাচ্চা দিয়ে থাকে। সাধারনত এই জাতের ছাগীগুলো বছরে প্রায় ২ বার করে বাচ্চা দিয়ে থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে  এই জাতের ছাগী ৩-৪ টি বাচ্চাও দিয়ে থাকে। এ জাতের চামড়া বেশ উন্নত ও বিখ্যাত।

ছাগল ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিবেচ্য গুনাবলি:

ছাগীর ক্ষেত্রে:
  • নির্বাচিত ছাগী হতে হবে অধিক বংশীয় উৎপাদনশীল ও আকারে বড়।
  • নয় বা বারো মাস বয়সী ছাগী ( গর্ভবতী হলেও কোনো সমস্যা নেই) কিনতে হবে। 
  • ছাগীর পেট তুলনামুলক ভাবে বড় আকারে থাকতে হবে। পাজরের হাড় চওড়া, প্রসারিত, ও দুই হাড়ের মাঝখানে কমপক্ষে এক আঙ্গুুল ফাকা থাকতে হবে।
  • নির্বাচিত ছাগীর বাট ও ওলান সুগঠিত এবং সামন্জস্যপূর্ণ থাকতে হবে। 

পাঠার ক্ষেত্রে:

  • পাঠার বয়স বারো মাসের মধ্যে হতে হবে। আকারে বড় ও সুগঠিত হতে হবে।
  • পিছনের পা সুঠাম , সুগঠিত ও শক্তিশালী হতে হবে।
  • বয়স নির্ধারনের ক্ষেত্রে ছাগলের দাত দেখে বয়স নির্ধারন করা প্রয়োজন। বয়স বারো মাসের নিচে হলে দুধের সবগুলো দাত থাকবে। ১২-১৫ মাসের নিচে বয়স হলে স্বায়ী দাত ও ৩৭ মাসের উর্ধে বয়স হলে ৪ জোড়া স্বায়ী দাত থাকবে। 

যমুনাপাড়ী( রাম ছাগল) জাতের ছাগলের বৈশিষ্ঠ
  1. এদের শরীরে রং সাদা, কালো, হলুদ বাদামী বা বিভিন্ন কালারের হয়ে থাকে। 
  2. কান থাকে লম্বা ঝুলানো ও বাকা। পা খুব লম্বা ও পিছনের পায়ের পিছন দিকে লম্বা লোম বা কেশর থাকবে। এরা অত্যন্ত কষ্ট সহ্য করতে পারে। এবং এরা খুব চঞ্চল প্রকৃতির হয়ে থাকে। 
  3. একটি পূর্ণবয়স্ক পাঠার ওজন প্রায় ৬০-৯০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। এবং ছাগীর ওজন প্রায় ৪০-৬০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। 

বিটল ছাগলের বৈশিষ্ঠ: 

  • এদের পা লম্বা ও কান ঝুলানো প্রকৃতির। লেজও তুলনামূলকভাবে ছোট ও এদের শিং মোড়ানো অবস্থ্যায় থাকে। এদের দৈর্ঘ্য প্রায় ৮৬ সেন্টিামিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। 
  • এদের শরীর কম্প্যাক্ট এবং ভালো উন্নত। কান ও পা লম্বা প্রকৃতির হয়ে থাকে। এ ছাগলের মাথা একটি রোমান নাক যুক্ত বৃহদায়তন এবং বিস্তুত। এদের দুধ উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক গড়ে প্রায় ২.৫-৪ লিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। 
  • পুরুষ বিটল ছাগলের ওজন প্রায় ৫০-৬০ কেজি হয়ে থাকে। এবং মেয়ে বিটল ছাগলের ক্ষেত্রে ওজন প্রায় ৩৫-৪০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। 
  • খাদ্য হিসাবে চারন ভূমি ব্যবহার করা হয়। এরা প্রায় সব ধরনের গাছপালা, লতাপাতা, ঘাস খেয়ে থাকে। 
  • মহিলা ছাগল ২০-২২ মাস বয়সে প্রথমবারের মতো বাচ্চা জন্ম দেয়। 

বোয়ের ছাগলের বৈশিষ্ঠ:

  • সাদা ও সাদা যুক্ত বাদামি কালারের মাথা হয়ে থাকে। 
  • এদের মাথার রঙ বাদামি ও গায়ের রঙ সাদা হয়ে থাকে। 
  • এদের গায়ে বিভিন্ন বর্ণের আলাদা আলাদা দাগ থাকে।
  • এদের দীর্ঘ ঝুলানো কান রয়েছে এজন্যই এদের দেখতে খুুব সুন্দর দেখায়।
  • দ্রুত বর্ধনশীল ও উর্বরতা হারের জন্য বিশ্ব বিখ্যাত।
  • এই জাতের ছাগল গুলো বাচ্চা ৩ মাস বয়সেই প্রায় ৩৫ কেজির উপরে হয়ে থাকে। 
  • পূর্ণবয়স্ক  একটি ছাগলের ওজন প্রায় ১২০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। 
  • এরা খুুুব শক্তিশালী ও এদের ছোট আকারের ৪ ‍টি পা রয়েছে। 

তোতাপুরি ছাগলের বৈশিষ্ঠ:

  • তোতাপুরি ছাগলের মুখের নিচের পাটির চেয়ে উপরের পাটি সাধারনত খাটো থাকবে। 
  • নিচের মাড়ি দিয়ে উপরের মাড়ি ঢাকা থাকবে। 
  • কান লম্বা ও শিং বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। কপালের নিচ থেকে নাক পর্যন্ত বাকা থাকবে। 

হারিয়ানা ছাগলের বৈশিষ্ঠ:

  • হারিয়ানা বা কোটা শিং পাচানো, কান লতা পাতার মতো ভাজ থাকে। এরা বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। 
  • এই জাতের পূর্ণবয়স্ক পাঠার ওজন প্রায় ১৩০-১৪০ কেজি হয়ে থাকে। এবং পূর্ণবয়স্ক ছাগীর ওজন প্রায় ৫০-৭০ কেজি পর্যন্ত হয়ে  থাকে। এরা সাধারনত ৯-১০ মাস বয়সে পূর্ণবয়স্ক হয়।
        
ছাগলের বাসস্থান:

 খামারের যায়গা/ আবাস্থল / বাসস্থান নির্বাচনঃ 

  • জায়গা উচু হতে হবে, যেন বৃষ্টির পানি না জমে।
  • প্রধান সড়ক হতে দুরে, তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকতে হবে। 
  • খোলামেলা পরিবেশ হতে হবে।
  • কাকড় ও বালু মিশ্রিত স্থ্যান যেখানে পানি খৃুব সহজে শুকিয়ে যেতে পারে।
  • পানি নিঃষ্কাশনের জন্য অত্যন্ত ভালো ব্যবস্থা থাকতে হবে।
  • ঘন বসতি এলাকা ও শহর থেকে দুরে থাকতে হবে। 
  • পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ ও ভালো ব্যবস্থা থাকতে হবে। 
  • শ্রমীক মজুুরি কম ও জায়গার সহজলভ্যতা যায়গা নির্বাচন করা প্রয়োজন।
  • পর্যাপ্ত ফলের গাছ, চারণ ভুমি আছে এমন যায়গা নির্বাচনের সময়  মাথায় রাখতে হবে।

ছাগলের ঘর কিভাবে নির্বাচন করবেনঃ


  • যাদের আর্থিক সামর্থ্য কম তারা তাদের রান্না ঘরের সাথে আলাদা পার্টিশন করে ছাগল পালন করেত পারেনে। 
  • ঘরের মধ্যে ছাগলের ঘুমানোর জন্য বাশের চটা বা কাঠের তক্তা দ্বারা মাচা তৈরি করতে হবে। আর্থিক সামর্থ্য না থাকলে বা পরবর্তীতে সক্ষম হলে প্রথক ঘর তৈরি করা ভালো। 
  • পারিবারিক ঘরের জন্য নির্দিষ্ঠ কোনো আকার কা পরিমাপ নেই। তবে ঘরে প্রচুর পরিমাণে আলোবাতাসের ব্যবস্থ্যা থাকতে হবে। এজন্য ঘর পূর্ব পশ্চিম লম্বা ও উত্তর দক্ষিণ খোলা রাখা উচিত। বন্য প্রাণির উপদ্রব হতে রক্ষার জন্য বাশের মোটা চটা ‍দিয়ে ২.৫ সেন্টিমিটার করে ফাকা ফাকা করে ঘিরে দিতে হবে। 
  • শীতের সময় ফাকা স্থানে বা জানালায় পাটের চট ব্যবহার করা ভালো। 
  • ছাগলের জন্য দু চালা ঘর বেশি উপযোগি। 
  • ঘরের উত্তর পশ্চিম ঢালু ও মধ্য বরাবর সামান্য উচু রাখা ভালো। মেঝেতে ইটের সোলিং করা যায়।
  • দিনে ছাগল রাখার জন্য ঘরের সামনে এবং পাশের খোড়ারের মধ্যে ছায়া যুক্ত হওয়া ভালো।


মাচা পদ্ধতিতে ছাগল পালনঃ


ছাগলকে দিনের বেলায় কয়েক ঘন্টা উন্মুক্ত মাঠে চরানোর পাশাপাশি অবশ্যিষ্ঠ সময় মাচায় আবদ্ধ অবস্থায় রেখে কাচাঘাস সহ দানাদার খাবার সরবরাহ করা ভালো। এবং স্বাস্থ্য ও প্রজনন ক্ষমতা প্রদান করে পালনকে মাচা পদ্ধতিতে ছাগল পালন করা ভালো। 

মাচা পদ্ধতিতে ছাগল পালনে অন্যতম সুবিধাগুলোঃ

  • সর্দিকাশি ও নিউমোনিয়া রোগ খুব কম হবে। 
  • কৃমি, উকুন, চর্মরোগ খুব কম হবে। 
  • প্রস্রাব , গোবর সাথে সাথে নিচে পড়ে যায় ফলে শরীর পরিষ্কার থাকে।
  • শীতকালে ঠান্ডা কম লাগে। 
  • মাচার উপর ও নিচ দিয়ে বাতাস চলাচল করে বিধায় মাচা সবসময় শুকনো থাকে। যা ছাগলের জন্য খুব আরামদায়ক হয়ে থাকে। 
  • সর্বোপুরি ছাগলের স্বাস্থ ভালো থাকে ও উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।

ছাগলের খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ 

  • আশ জাতীয় খাবার ।
  • দানাদার খাবার।

ছাগল যে ধরনের খাবার খেতে পছন্দ করেঃ

  • ছাগল টাটকা ঘাস পছন্দ করে। 
  • পাতা খেতে বেশি স্বাছন্দ বোধ করে। 
  • ছাগলের সামনে পাতাসহ গাছ দেওয়া হলে ছাগল শুধু পাতা খায় ঘাস খায় না। 
  • দনাদার খাদ্যের বেলায় ছাগল গমের দানা, ভূট্টার দানা খেতে ভালোবাসে। 
  • ছাগল বাদামের খৈল, তিলের খৈল খেতে পছন্দ করে। 
  • আস্ত অংশের চেয়ে শস্য দানা ও তৈল বীজ ভাঙ্গা বেশি পছন্দ করে। 
  • দানাদার খাদ্যের সাথে মোলাছেস ( চিটাগুড় ) মিশানো অবস্থাই খেতেও অনেক পছন্দ করে। 


Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)